টায়ারে জেল ভরার সুবিধা ও অসুবিধা
2020 May 10 11:22:00
আমরা যারা বাইক বা মোটর
সাইকেলে পারদর্শী কিংবা মোটর
বাইকে বেশ কমফোর্টেবল তাদের
কাছে টায়ার জেল শব্দটি বেশ
পরিচিত। আবার যাদের এসব
সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও
ধারণা নেই তারাও কিন্তু
শব্দটা শুনেই বুঝতে পারেন
এটা টায়ারের সাথে রিলেটেড বা
সম্পৃক্ত কিছু একটা। আচ্ছা
তবে আগে জেনে নেওয়া দরকার
টায়ার জেলটা আসলে কি।
টায়ার জেলের আরেকটা নাম আছে।
যদিওবা ঐ নামটা ওতটা পরিচিত
না সবার কাছে। অর্থাৎ এই
নামটা অনেকেরই অজানা। টায়ার
জেলের আরেকটা নাম হচ্ছে
সিলেন্ট।
টায়ার জেল বা সিলেন্ট কি:
টায়ার জেল বা সিলেন্ট মূলত এক
প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ।
একটি মোটর বাইক বা মোটর
সাইকেলে এর প্রয়োজনীয়তা
অপরিসীম। আমি অপরিসীম বলছি
কারণ এই রাসায়নিক পদার্থ
চাকার লিক প্রতিরোধ করে থাকে
বা লিক প্রতিরোধে
প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে।
যদি একজন মোটর বাইক চালককে
জিজ্ঞেস করা হয় মোটর বাইকের
সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার
কোনটা? তাহলে নিঃসন্দেহে
তিনি বলবেন টায়ার পাংচার
হওয়া। আর এই বিরক্তিকর
সমস্যার সমাধান হিসেবেই কাজ
করে থাকে টায়ার জেল বা
সিলেন্ট।
টায়ার জেল বা সিলেন্ট
ব্যবহারের অনেক সুবিধা আছে।
যার ফলে বাইক রাইড হয়ে উঠেছে
সহজ থেকেও সহজতর। ঠিক
একইভাবে এই টায়ার জেল বা
সিলেন্ট ব্যবহারের অনেক
অসুবিধে ও আছে। এবার আমি
আলোচনা করবো এই টায়ার জেলের
সুবিধা আর অসুবিধে নিয়ে।
টায়ার জেল বা সিলেন্ট
ব্যবহারের সুবিধা
১. টায়ার জেল ব্যবহার করলে
যাত্রা পথে সমস্যার সম্মুখীন
হওয়ার সম্ভবনা কম। যেমন,
রাস্তায় টায়ার পাংচার হলেও
টায়ার জেল এই পাংচার হওয়া বা
টায়ারের ক্ষত স্থান খুব
সহজেই পূরণ করে দেয়। যার ফলে
যাত্রা পথে ব্যাঘাত ঘটে না।
২. অনেকেই বলে থাকেন হাই
স্পিডে রাইড দিলে টায়ার জেল
ব্যবহার করা যায় না। এমন
ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
টায়ার জেল হাই স্পীডেও
ব্যবহার করা যায়। বরং হাই
স্পীডে পাংচারের সম্ভবনা
থাকেই না টায়ার জেলের কারণে।
৩. টায়ার জেল ব্যবহার করা ভার
বোঝা কোন কাজ না। খুব সহজেই
ব্যবহার করা যায়। তবে
ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম জানা
উচিত। তবেই আআমাদের বাইক
রাইড আরো সহজতম হয়ে উঠবে।
৪. টায়ার জেল একবার যদি বাইকে
ধরা হয় তবে দ্বিধা ছাড়াই অনেক
দিন ব্যবহার উপযোগী। বাইকের
ইঞ্জিনিয়াররা বলে থাকেন
যতদিন না টায়ারে লিক দেখা
দিচ্ছে ততদিন টায়ার জেল
ঠিকঠাক থাকে। আবার অনেকেই
সময় বুঝে টায়ার জেল পরিবর্তন
করে নেন। এ ব্যাপারে মোটর
সাইকেল বা মোটর বাইক
ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ
নেওয়াই ভালো।
টায়ার জেল ব্যবহারের অসুবিধে
১. এমনটা না যে টায়ার জেল
ব্যবহার করছেন বলে টায়ারের
চিন্তা মাথা থেকে চিরতরে দূর
হয়ে যাচ্ছে। বরং খেয়াল রাখতে
হবে। এবং টায়ারে ছিদ্র দেখা
দিলে সেটা মেরামত করিয়ে
নেওয়া উচিত।
২. টায়ার জেল যেমন বাইক রাইডকে
অনেক সহজতর করে তেমনি
দুঃচিন্তাও নিয়ে আসতে পারে
রাইডারের জন্য। যেহেতু এটা
একটি রাসায়নিক পদার্থ সেজন্য
ঠিক মত ব্যবহার করতে হবে।
অন্যতায় নানা অসুবিধের
সম্মুখীন হতেই হবে।
৩. টায়ার জেলকে সঠিকভাবে
চাকায় প্রবেশ করাতে হবে। যদি
চাকায় প্রবেশ করাতে ব্যর্থ
হোন তবে এই রাসায়নিক পদার্থ
এক জায়গায় জমা হয়ে টায়ার নষ্ট
করে দিবে।
৪. টায়ার জেল এক জায়গায় জমে
থাকলে বাইক রাইডের সময়
বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে
পড়তে হবে। কেননা এক জায়গায়
জমা হয়ে থাকে তবে চাকা
সঠিকভাবে ঘুরতে পারবে না।
অনেকেই জানতে চান টায়ার জেল
সব বাইকের টায়ারে ব্যবহার
করা যায় কি না। এ ব্যাপারে
সঠিক ইনফরমেশন না থাকার
কারণে অনেকেই দুঃচিন্তায় পড়ে
যান। বাইকে সাধারণত দুই
ধরনের টায়ার থাকে। একটি টিউব
টায়ার বা টিউব সহ টায়ার আর
অন্যটি টিউবলেস টায়ার।
টিউবলেস টায়ারে টায়ার জেল
ব্যবহার করা যায়। আর টিউব সহ
টায়ার বা টিউব টায়ারে টায়ার
জেল বা সিলেন্ট ব্যবহার করা
যায় না।
টায়ার জেল ভরার নিয়ম
কিছু কিছু টায়ার জেল আছে
যেগুলো নিজে ভরা অসম্ভব। আমি
অসম্ভব বলছি এ কারণেই যে খুব
সূক্ষ্ম ভাবে টায়ারের ভেতরে
জেল ভরতে হয় যেন এক জায়গায় জমে
না থাকে। এজন্য বাইকে
পারদর্শী এমন মেকানিকের
প্রয়োজন পড়ে। আবার এখন কিছু
টায়ার জেল বাজারে এসেছে
যেগুলো ব্যবহার করা অনেক
সহজ। চাইলে সঠিক নিয়ম অনুসরণ
করে আমরা নিজেরাই সেটা
টায়ারে ভরতে পারি। তবে এ
ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে প্রতিটা
ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।
ভালো টায়ার জেল চেনার উপায়
বাজারে এত এত টায়ার জেল এসেছে
যে কোনটা সঠিক আর কোনটা
ক্ষতিকর সেটা বুঝে ওঠাই এখন
বড় দায়। তারপর অনেকে আবার
ব্যবহারের সময় অনুযায়ী টায়ার
জেলের ব্র্যান্ড সিলেক্ট করে
থাকেন। কিন্তু লোক মুখে শোনা
কথায় ব্র্যান্ড নির্বাচন করা
মোটেও উচিত না। কেননা এটি
একটি রাসায়নিক পদার্থ। আপনার
প্রিয় বাইকের টায়ারের
নিশ্চয়তা এর উপর নির্ভর করে।
তবে বেশিরভাগ বাইক মেকানিক ও
মোটর বাইক ইঞ্জিনিয়ারেরা
কুইক ফিক্স নামক একটি
ব্র্যান্ড সিলেক্ট করে থাকেন
যারা অনেকদিন ধরেই
বাংলাদেশের বাইকারদের ভালো
সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই
ব্র্যান্ড ৯ মিলিমিটার
পর্যন্ত ছিদ্র সঠিকভাবে পূরণ
করতে সক্ষম।
টায়ার জেলের দাম
টায়ার জেল বা সিলেন্টের দাম
নিয়েও আছে বিতর্ক। কেউ বলছেন
এটার দাম কম তো অন্যটার থেকে
বেশি। এখানে এই বিতর্ক থেকে
চাইলেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সঠিক ভাবে সিলেন্ট বা জেল
নির্বাচন করে নিলে তখন আর দাম
নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না।
যেমন আমি যদি উদাহরণ সহ
বুঝিয়ে বলি তবে কুইক ফিক্স
নামক যে টায়ার জেলের কথা উপরে
বললাম তার দাম সারা
বাংলাদেশেই একই। ৪৫০ টাকা
করে পুরো বাংলাদেশে বিক্রয়
করা হয়। তারপরও যদি দামের
তারতম্য পাওয়া তবে
সেক্ষেত্রে গায়ে লেখা রেটটাই
কার্যকর। অর্থাৎ গায়ে লেখা
৪৫০ টাকাই আসল দাম। এর বেশি
হলে কয়েকটা দোকান দেখে তারপর
কেনাই মঙ্গল।
একজন বাইক রাইডার একটি লং
ড্রাইভে যাওয়ার আগে অবশ্যই
বাইকের টায়ার নিয়ে চিন্তা
করেন। কেননা এত লম্বা
জার্নিতে যদি হুট করেই টায়ার
পাংচার হয় আর আশে পাশে কোন
মেরামতের দোকান না থাকে তবে
রাতে বিরাতে অনেক বড় সমস্যায়
পড়তে হবে। কিন্তু টায়ার জেল
ব্যবহারের ফলে এই চিন্তা
থাকলেও খুব কম থাকে। কেননা
টায়ার জেল টায়ারের ক্ষত খুব
সহজেই পূরণ করার ক্ষমতা রাখে
এবং এটা পরীক্ষিত। টায়ার জেল
নিয়ে বিতর্ক অনেক জায়গায়ই
আছে। নিজের বাইকের জন্য সঠিক
টায়ার জেল বা সিলেন্ট
নির্বাচনের বিকল্প নেই। একই
সাথে নিশ্চিত হতে হবে টায়ার
জেল টায়ারের প্রয়োজনীয় এয়ার
প্রেশার নিশ্চিত করতে পারছে
কি না। একইসাথে ব্যবহারের
পরে সঠিক লেভেল ও নিশ্চিত
করতে হয়। টায়ার জেল বা
সিলেন্ট ছয় মাসের বেশি
ব্যবহার করা উচিত নয়। আমাদের
যাত্রাপথে যেকোনো ভাবেই
টায়ার পাংচার হয়ে যেতে পারে।
এজন্য টায়ার জেলের বিকল্প
নেই।
উপরে আমি টায়ার জেলের সুবিধা
আর অসুবিধে নিয়ে আলোচনা
করলাম। একজন বাইকারের কাছে এ
ব্যাপারটি অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই
ব্লগে আমরা নিয়মিত বাইকের
প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিয়মিত
বিস্তারিত আলোচনা করবো। কারণ
আমরা চাই একজন বাইকার তার
স্বপ্নের বাইকের সুবিধা
অসুবিধে সম্পর্কে অবগত হোক
আর প্রয়োজনীয় বা সময় উপযোগী
ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। মোটর
বাইক বা মোটর সাইকেল সবার
কাছেই একটি স্বপ্নের
বহিঃপ্রকাশ নিঃসন্দেহে।
[অনলাইন থেকে সংগৃহীত]