টপ গিয়ারে মোটরসাইকেল
2019 Jul 01 07:22:00
কয়েক বছর আগেও দেশের বাইরে
থেকে সম্পূর্ণ ফিটিং করা
মোটরসাইকেল আমদানি করা হতো।
আমদানি শুল্ক গুনতে হতো
প্রায় ১৮১ শতাংশ। ফলে
মোটরসাইকেলের দামও ছিল
অনেকের নাগালের বাইরে। এখন
দেশেই তৈরি হচ্ছে, ফিটিং
হচ্ছে। ফলে দাম কমার
পাশাপাশি অত্যাধুনিক
বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাজারে হরদম
আসছে বাহারি সব বাইক। এর
সঙ্গে যোগ হয়েছে রাইড
শেয়ারিংয়ের রমরমা বাণিজ্য।
যার কারণে দেশে মোটরসাইকেলের
বাজার বাড়ছে হুড়মুড় করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের
সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উঠে
আসছে মোটরসাইকেলশিল্প।
সরকারও এ খাত নিয়ে ইতিবাচক
মনোভাব রাখছে। তাই বিনিয়োগ
বাড়ছে আগের চেয়ে দ্রুত।
বাড়ছে জনসম্পৃক্ততা এবং
কর্মসংস্থানও। এরই মধ্যে
দেশেই বিশ্বমানের
মোটরসাইকেল তৈরি করে ২০২৭
সালের মধ্যে এ খাতে ১৫ লাখ
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য
ঠিক করে গত ১১ সেপ্টেম্বর
‘মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন
নীতিমালা ২০১৮’ খসড়া
নীতিমালায় অনুমোদন দিয়েছে
সরকার।
নীতিমালায় দেশীয় প্রযুক্তির
মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে
পাঁচ লাখ এবং ২০২৭ সালের
মধ্যে ১০ লাখ মোটরসাইকেল
উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়
ও আন্তর্জাতিক বাজারে সেগুলো
সরবরাহ করা হবে।
সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা
একসময় মোটরসাইকেলটাকে
তরুণদের শখের জিনিস ধরা হতো।
এখন দ্রুত যোগাযোগের বাহন
হিসেবেই এর কদর বেশি। ফ্যাশন
থেকে হয়ে গেছে কর্মব্যস্ততা
ও যানজট এড়ানোর অন্যতম
হাতিয়ার। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা
ও দাম কমার কারণে এখন প্রায় সব
শ্রেণি-পেশার মানুষই
মোটরসাইকেল ব্যবহার শুরু
করেছে। বিশেষ করে সরকার রাইড
শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদন
করার পর থেকে মোটরসাইকেল
বিশেষ কোনো শ্রেণি-পেশার
মানুষের মধ্যে আটকে নেই।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘বাংলাদেশে মোটরসাইকেল
সংযোজন শিল্প গড়ে উঠেছে। এ
খাত আরো বিকাশের লক্ষ্যে
নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে।
জিডিপিতে
মোটরসাইকেলশিল্পের অবদান
এখন ০.৫ শতাংশ। এটা ২০২৫ সালের
মধ্যে ২.৫ শতাংশ করার লক্ষ্য
নির্ধারণ করা হয়েছে। এ
নীতিমালার মাধ্যমে দেশেই
বিশ্বমানের কারখানা সৃষ্টির
জন্য সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত
করা হবে।’
শিল্প মন্ত্রণালয়ের
উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো.
আবদুল জলিল বলেন, ‘দেশে
মোটরসাইকেলের বর্তমান
বাজারের আকার চার থেকে সাড়ে
চার হাজার কোটি টাকা। এ খাতে
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ
কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ লাখ
মানুষের। তবে রাইড শেয়ারিং
জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে
সংখ্যাটা চক্রবৃদ্ধি হারে
বাড়ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক
মোটরসাইকেলসহ ৯টি পণ্য
রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ
সহায়তা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও
জারি করেছে। গত ১১
সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর
হয়েছে। মূলত বৈশ্বিক বাজারে
এসব পণ্যের প্রতিযোগিতা করার
সক্ষমতা বাড়ানো ও রপ্তানিকে
চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যেই নগদ
সহায়তার মতো প্রণোদনাও দেওয়া
হচ্ছে।
আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং
সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ
নেটওয়ার্ক বড় হওয়া, বিশেষ করে
গ্রামীণ জনপদে পাকা সড়ক
নির্মাণের কারণে বাইকের
চাহিদা বাড়ছে বলে ধারণা
সংশ্লিষ্টদের। বছরে এ খাতে
প্রবৃদ্ধি এখন ১০-১৫ শতাংশ।
২০১৬ সালের শেষদিকে রাইড
শেয়ারিং চালু হওয়ার পর এ খাতে
পরোক্ষ প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার
মতো।
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল
অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড
ম্যানুফ্যাকচারার্স
অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ)
সূত্র জানায়, ‘মোটরসাইকেল
এখন প্রগ্রেসিভ
ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প
খাত। চলতি বছরে টিভিএস,
হোন্ডা ও হিরো দেশে
মোটরসাইকেল উত্পাদন শুরু
করতে যাচ্ছে। দেশে উত্পাদিত
হলে দাম আরো কমবে। আর চাহিদা
বাড়লে বিনিয়োগও থেমে থাকবে
না।’
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট
অথরিটির (বিআরটিএ) সর্বশেষ
তথ্য অনুসারে দেশে এখন
নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের
সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮১।
চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত বাস, ট্রাক,
অ্যাম্বুল্যান্স, কারগো,
প্রাইভেট কার, অটোরিকশা
প্রভৃতিসহ সারা বাংলাদেশে
মোট মোটরযান নিবন্ধনের
সংখ্যা ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার
১৮৯টি। এর মধ্যে শুধু
নিবন্ধিত মোটরসাইকেলই ২৩ লাখ
৩৬ হাজার ৬৮১টি। অর্থাৎ
দেশের বাদবাকি সব নিবন্ধিত
মোটরযানকে একত্রিত করলেও তা
মোট মোটরসাইকেলের চেয়ে কম।
বিআরটিএর তথ্য মতে, শুধু
রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে
পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি
মোটরসাইকেল (নিবন্ধিত)। ২০১৭
সালের শেষদিন পর্যন্ত
সংখ্যাটা ছিল পাঁচ লাখ ৭২
হাজার ৬৮৬টি। অর্থাৎ ৯ মাসে
ঢাকায় মোটরসাইকেল বেড়েছে ১২
হাজার ৮০৪টি। এ হিসাবে গড়ে
প্রতি মাসে রাজধানীতে
মোটরসাইকেল নেমেছে ১১৬৪টি,
অর্থাৎ দিনে ৩৮টিরও বেশি।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন,
রাজধানীর বাইরেও অনেকে
রেজিস্ট্রেশন করে ঢাকায়
চালান। তাই আসল সংখ্যাটা আরো
বেশিই হবে। তাঁরা আরো জানান,
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে
মোটরসাইকেল নিবন্ধন করার
প্রচলন কম। নিবন্ধন ছাড়াও
অনেকগুলো চলছে। তাই বলা যায়,
উল্লিখিত সংখ্যা কম তো নয়ই;
বরং আরো বেশি হবে।
আমদানিকারক ও পরিবেশকদের
তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে
প্রতিদিন হাজারেরও বেশি
মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে, যা
পাঁচ বছর আগেও অর্ধেক ছিল।
বর্তমানে দেশে প্রতি ১১৬ জনে
একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার
করছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়,
২০১০ সালের আগে দেশে
নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল সাত
লাখ ৫৯ হাজার ২৫৭টি। ২০১৮
সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট
বছরেরও কম সময়ে দেশে
নিবন্ধিত মোটরসাইকেল বেড়েছে
১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪২৪টি। এ
শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে
ধারণা পেতে এ পরিসংখ্যানই
যথেষ্ট। তবে এর মধ্যে ২০১৫
সাল থেকে মোটরসাইকেলের বাজার
বেড়েছে হুড়মুড় করে। ওই বছর
দেশে দুই লাখ ৪০ হাজার ৩৫৮টি
মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়।
যেখানে ২০১৪ সালে হয়েছিল ৯০
হাজার ৬৮৫টি।
বড় ছয় দেশে বেশ কয়েকটি
প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল
উত্পাদন ও অ্যাসেম্বলিং
কারখানা গড়ে তুলেছে। রানার
অটোমোবাইলস লিমিটেড দেশেই
উত্পাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটি
স্থানীয় বাজারে বিক্রির
পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি
করছে। এসিআই মোটরস লিমিটেডের
ইয়ামাহা, টিভিএস অটো
বাংলাদেশের অ্যাপাচি,
ফিনিক্স, স্ট্রাইকার, নিলয়
মোটরসের হিরো, উত্তরা
মোটরসের বাজাজ বাজারে ভালো
অবস্থানে রয়েছে। টিভিএস এবং
হোন্ডা মোটরসাইকেল
অ্যাসেম্বলিং করছে
বাংলাদেশে।