বাইকের চেইনের যত্ন
2020 Apr 06 09:45:00
বাইকের চেইনের উপরই বাইকের
পারফরমেন্স, মাইলেজ এগুলো
নির্ভর করে। বাইকের যদি ভালো
পারফরমেন্স পেতে চান তবে
অবশ্যই চেইনের যত্ন নিতে
হবে।
বাইকের চেইন এবং চেইনের কাজ :
চেইন হলো বাইকের এমন একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার
মাধ্যমে বা যার সাহায্যে
বাইক গিয়ার বক্সের শক্তি
বাইকের পেছনের চাকায় সরবরাহ
করে। আর এজন্যই এই চেইন
বাইকের অতি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ।
মোটর বাইক ইঞ্জিনিয়াররা বলেন
প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ কিলো
মিটার বাইক রাইডের মধ্যে কম
করে হলেও একবার চেইন
পরিষ্কার করা উচিত। আর যাদের
চেইন কভার নেই তাদের বেলায়
৫০০ কিলো মিটার পর পরই চেইন
পরিষ্কার করাতে হয়। এর কোন
বিকল্প নেই। কিন্তু চেইন
পরিষ্কার সব সময় সার্ভিসিং
সেন্টারে গিয়ে করাতে হবে এমন
কোন নিয়ম নেই। আপনি যদি সঠিক
ভাবে বাইকের চেইন পরিষ্কার
করতে পারেন তবে আপনার নিজেরই
উচিত বাইকের চেইন পরিষ্কার
করা।
বাইকের চেইন পরিষ্কার করার
নিয়ম :
প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলো :
১. টুথব্রাশ,
২. কেরোসিন,
৩. নরম কাপড়,
৪. চেইন অয়েল কিংবা গিয়ার অয়েল
কিন্তু অব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল
হলেও চলবে,
৫. লুব গান বা সিরিঞ্জ।
চেইন ওয়াশ বা পরিষ্কার করার
জন্য বাজারে ক্লিনার পাওয়া
যায় যেগুলো আপনার জন্য চেইক
পরিষ্কারে সুবিধা জনক। এবং
পরে ব্যবহারের জন্য
লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়। আপনি
চাইলে ব্যবহার করতে পারেন।
কাজ শুরুর আগে একটি সমতল
স্থানে বাইকটিকে ডাবল
স্ট্যান্ড করুন। বাইকে চেইন
কভার থাকলে সেটি অবশ্যই খুলে
ফেলতে হবে। আর যাদের বাইকে এই
কভার নেই তাদেরকে এই কাজটা
করতে হবে না। চেইন কভার খুলতে
হবে খুবই সূক্ষ্ম ভাবে। না
হলে বাইকে দাগ বা স্ক্রেচ
পড়তে পারে। কাজের শুরুতেই
টুথ ব্রাশ কেরোসিনে ডুবিয়ে
চেইনে কেরোসিন লাগাতে থাকেন।
এভাবে অনেকক্ষণ লাগাতে হবে।
এক হাত দিয়ে কেরোসিন লাগান আর
অন্য হাতে চাকা ঘুরাতে
থাকেন। এই ভাবে পুরো চেইনটি
কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে নিতে
হবে। এবার কিছু সময় অপেক্ষা
করার পালা।
এই কিছু সময়ে চেইনে লেগে থাকা
ময়লা গুলো নরম হতে শুরু করবে।
এবারের কাজ হলো নরম হয়ে যাওয়া
ময়লা গুলোকে টুথ ব্রাশ দিয়ে
ঘষে ঘষে বের করে নিয়ে আসা। তবে
বাজারে আরেক ধরনের চেইন
ব্রাশ পাওয়া যায় আর এটি হলে
পরিষ্কারে আরো সুবিধা হয়।
আপনার সুবিধার জন্য চাইলে
ব্যবহার করতে পারেন।
পুরো চেইন ব্রাশ করা হয়ে গেলে
আবার নতুন করে পুরো চেইন
কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে দিতে
হবে। আবার কিছু সময় অপেক্ষা
করতে হবে। তবে ৫ মিনিটের মত
অপেক্ষা করলেই হবে। এবার ঘষে
ঘষে ব্রাশ করা শুরু করুন আগের
মত। কিন্তু এখন যদি মনে হয়
ময়লা গুলো খানিকটা শক্ত তবে
নরম কাপড়ে কেরোসিন লাগিয়ে
ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। ঠিক
একইভাবে পেছনের চাকা ঘুরিয়ে
চেইনের কোথাও ময়লা লেগে আছে
কি না পরীক্ষা করতে হবে।
থাকলে সেখানের ব্রাশ দিয়ে
ঘষে ময়লা তুলে তারপর নরম কাপড়
দিয়ে মুছে ফেলুন। এই ভাবে
বাইকের চেইনের পেছনের
স্প্রোকেট টিও পরিষ্কার
করুন।
এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যাপার বলবো। বাইকের চেইনে
কোন ভাবেই গ্রীজ জাতীয় জিনিস
ব্যবহার করা যাবে না। অনেকেই
কাজ সহজ হওয়ার জন্য গ্রীজ
ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু
এটা একদম ঠিক নয়। কারণ
গ্রীজের ঘনত্ব অনেক বেশি।
ফলে উল্টো আরো চেইনে ময়লা
আটকে রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া আরেকটি কারণ হলো শীতের
দিনে গ্রীজ ও ময়লা জমে শক্ত
হয়ে গিয়ে চেইনকে
স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে দেয় না।
বাধার সৃষ্টি করে। তাই
চেইনের জন্য ব্যবহৃত
লুব্রিকেন্ট বা গিয়ার অয়েল
কিংবা অব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল
ব্যবহার করা যায়।
সঠিকভাবে বাইকের চেইন
পরিষ্কার করা শেষ? তবে এবার
হলো লুব করার পালা। কিন্তু এর
জন্যও কিছু নিয়ম আছে। আর নিয়ম
মেনেই লুব করতে হয়। চলুন জেনে
নেওয়া যাক বাইকের চেইন লুব
করার নিয়ম।
লুব করার নিয়ম :
আপনি চাইলে লুব্রিকেন্ট সুই
বিহীন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে
পারেন। পেছনের চাকা ঘুরিয়ে
পুরো চেইনে লুব্রিকেন্ট
লাগাতে হবে। হাত দিয়ে চাকাটি
ঘুরাতে হবে অনেক বার যেন
লুব্রিকেন্ট পুরো চেইনে
পৌঁছায়। এবার কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করতে হবে। কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করার পরে দেখা যাবে
অতিরিক্ত অয়েলটি ঝরে পরে
যাচ্ছে। এবার বাইকে যদি চেইন
কভার থাকে তবে সেটি লাগিয়ে
নিতে পারেন। ব্যস কাজ শেষ।
যদি রোডের কন্ডিশন ভালো হয়
তবে মিনিমাম ৫০০ কিলো
মিটারের জন্য আপনার চেইন
নিয়ে আর কোন টেনশন থাকবে না।
তারপর ও কারো কারো মতে
ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সহজ
ভাষায় বললে এই ৫০০ কিলো মিটার
কিংবা ১০০০ কিলো মিটার এটা
সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার
চালানোর উপর। এবং একই সাথে
আপনি কোন ধরনের রাস্তায়
চালাচ্ছেন সেটাও একটি বড়
ব্যাপার। রাস্তার কন্ডিশন
খুব বেশি খারাপ আর আপনার
চালানোর অবস্থাটাও সে
ক্ষেত্রে এমন ও হতে পারে
আপনাকে এক সপ্তাহ বা দশ দিন
পরেই আবার পরিষ্কার করতে
হবে। তবে যে ভাবেই চালানো হোক
না কেন প্রতি মাসে কম করে হলেও
দুই বার চেইন যদি পরিষ্কার
করা হয় তবে চেইন নিয়ে আপনার আর
কোন অভিযোগ থাকবে না
নিশ্চিত।
বাইকের চেইন পরিষ্কার করাটা
আমরা অনেক বড় কাজ মনে করি।
কিন্তু যদি সঠিক নিয়ম জানা
থাকে তবে অবশ্যই অত্যন্ত সহজ
একটি কাজ। অনেকেই নিয়ম জানে
না বলে এই কাজের জন্য ও
সার্ভিস সেন্টারে ছুটে যায়।
কিন্তু বাইক যেহেতু আপনার
তাই আপনাকেও কিছু ব্যাপারে
ধারণা রাখতে হয়। না হলে
আপনারই বিপদ। সব কাজে টাকা
দিলে সাথে করে এমন ছোট কাজেও
টাকা খরচ করলে আপনার নিজেরই
বাইকের প্রতি একটা অনিহা চলে
আসবে। তাই উচিত সকল কাজ
সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা
এবং নিয়ম জেনে রাখা।
[অনলাইন থেকে সংগ্রহ]