বাইকে চেপে ভারত ভ্রমণ

শপিং কার্ট

অর্ডারের জন্য নির্বাচিত পন্যের তালিকা

সর্বমোটঃ

বাইক খুঁজুন

প্রডাক্ট ক্যাটাগরি

বাইকে চেপে ভারত ভ্রমণ

2019 Jul 01 09:11:00
বিয়ের আগে মোটরসাইকেলের ব্যাপারে ভীষণ অ্যালার্জি ছিল রাহিমা আক্তারের। ২০১৫ সালে বিয়ে করলেন মো. সাজেদুর রহমানকে। কিছুদিনের মধ্যেই একটা মোটরবাইক কিনলেন সাজেদুর। রাহিমা আক্তারের ভাষায়, ‘একেই বলে কপাল! যে মোটরসাইকেলে চড়তে খুব অনীহা ছিল, সেই মোটরসাইকেলে চেপেই আমরা একদিন চলে গেলাম শ্রীমঙ্গলে! বিয়ের পর সেটাই ছিল আমাদের প্রথম ঘোরাঘুরি।’ শ্রীমঙ্গল দিয়ে হলো শুরু। তারপর সরকারি চাকরিজীবী সাজেদুর ছুটি পেতেই স্নাতকপড়ুয়া স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে গেলেন টেকনাফ, চুয়াডাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার কিংবা তেঁতুলিয়ায়। বাহন? অবশ্যই সেই মোটরসাইকেল। ঢাকার খিলগাঁওবাসী এই দম্পতি লম্বা ছুটি না পেলেও মোটরসাইকেল-যাত্রায় নেমে পড়তেন প্রায়ই। সে ক্ষেত্রে গন্তব্যের নাম হতো মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাট। ২৪ জানুয়ারি সাজেদুরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল প্রথম আলো কার্যালয়ে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন, ‘দেশের ভেতর এই ভ্রমণগুলোই ছিল আমাদের অভিজ্ঞতা। আর মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরতে আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে। কারণ, এই বাহনটায় চেপে বসলে ইচ্ছামতো যাত্রাবিরতি দেওয়া যায়। প্রকৃতি বা এলাকাটার সংস্কৃতি উপভোগ করা যায় স্বাধীনভাবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল-যাত্রায় খরচও কম। তো এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন ঠিক করি, মোটরসাইকেলে চেপে আমরা ভারত থেকে ঘুরে আসব।’ ঢাকার খিলগাঁওবাসী এই দম্পতি লম্বা ছুটি না পেলেও মোটরসাইকেল-যাত্রায় নেমে পড়তেন প্রায়ই। সে ক্ষেত্রে গন্তব্যের নাম হতো মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাট। ২৪ জানুয়ারি সাজেদুরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল প্রথম আলো কার্যালয়ে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন, ‘দেশের ভেতর এই ভ্রমণগুলোই ছিল আমাদের অভিজ্ঞতা। আর মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরতে আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে। কারণ, এই বাহনটায় চেপে বসলে ইচ্ছামতো যাত্রাবিরতি দেওয়া যায়। প্রকৃতি বা এলাকাটার সংস্কৃতি উপভোগ করা যায় স্বাধীনভাবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল-যাত্রায় খরচও কম। তো এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন ঠিক করি, মোটরসাইকেলে চেপে আমরা ভারত থেকে ঘুরে আসব।’ ২৭ নভেম্বর ২০১৭: তবে একলা চলো রে অনুপ্রেরণা আর সাহস থাকলেই তো হয় না, মোটরসাইকেলে চেপে ভিনদেশের রাস্তায় নামার অনেক ঝক্কি আছে, সামলাতে হয় সেসবও। সাজেদুর বলছিলেন, ‘ছুটি পাওয়ার জন্য অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। প্রায় আট মাস ধরে ছুটি, ভিসা এবং বিদেশে নিজস্ব বাহন নিয়ে যাওয়ার অনুমতিপত্রের (কার্নে দে প্যাসেজেস এন দুয়ান) জন্য ছোটাছুটি করতে হয়েছিল। তারপর মেরামত করতে হয়েছিল মোটরসাইকেলটাও। অবশেষে ২৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে বের হলাম। পরদিন ২৮ নভেম্বর বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে নামলাম আমি ভারতের রাস্তায়।’ আমি! আমরা নয় কেন? যাত্রার শুরুতে সাজেদুর একাই ছিলেন। রাহিমার ভিসা এবং পরীক্ষার কারণে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি যোগ দেবেন দিল্লি থেকে। ফলে তার আগ পর্যন্ত সাজেদুর গাইলেন—‘তবে একলা চলো রে’। ৪ ডিসেম্বর ২০১৭: ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু বিহারে রাতে থাকা নিরাপদ নয় দেখে লক্ষ্ণৌর উদ্দেশে রওনা হন সাজেদুর। সারা রাত মোটরসাইকেল চালিয়েছেন। তখন সকাল, লক্ষ্ণৌ আর মাত্র ৭০-৮০ কিমি দূরে; সাজেদুরের শরীর ক্লান্ত, চোখে রাজ্যের ঘুম। রাস্তাটা যেন নিঃসঙ্গ, সুনসান আর ফাঁকা। সাজেদুরের কথায়, ‘এক লেন থেকে আরেক লেনে যাওয়া যায় চোখ বন্ধ করে।’ ফলে চোখের পলক ফেললে আর খুলতে ইচ্ছা করে না তাঁর। একবার বন্ধ করলে চোখ খোলে মোটরসাইকেলের ঝাঁকুনিতে। ওভাবে কয়েকবার ঘুমিয়েও পড়েছিলেন সাজেদুর! শেষেরবার তো রাস্তার বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম! সাজেদুর চোখ বড় বড় করে বলছিলেন, ‘পরে দেখলাম, এভাবে আর যাওয়া যাবে না। তাই একটু সামনে গিয়ে একটা ধাবাতে চা খেয়ে, চোখে-মুখে পানি দিয়ে ধাতস্থ হলাম। মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে যে ঘুমিয়ে পড়ব, কখনো ভাবিনি!’ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭: বাহির হয়ে এসো তুমি দিল্লির হিমাংশু তিওয়ারিও বাইকার। ছোটখাটো গড়ন, গোঁফজোড়া বিশাল, খুব আমুদে আর আন্তরিক হিমাংশুর সঙ্গে সাজেদুরের পরিচয় ফেসবুকে। দিল্লিতে গিয়ে খাতিরটা জমে উঠতে সময় নিল না। সাজেদুর বলছিলেন, ‘হিমাংশুকে বললাম, আজ আমার বউ আসবে, রাত একটার ফ্লাইটে। সে শুনেই বলল, “চলো তাহলে বিমানবন্দরে যাই।”’ মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সাজেদুর ও হিমাংশু। বিমানবন্দরের সামনে এক চেকপোস্টে পথ আগলে দাঁড়াল পুলিশ। পুলিশের কর্তা হিমাংশুকে বললেন, ‘মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত লাইট লাগিয়েছেন কেন? জানেন না, এখানে এই লাইট নিষিদ্ধ?’ এক দফা কথা-কাটাকাটি হলো। একপর্যায়ে হিমাংশু সাজেদুরকে দেখিয়ে বললেন, ‘ইয়ে বাংলাদেশ সে আয়া, আজ ইনকা বিবি আরাহি হ্যায়।’ পুলিশের কর্তা সাজেদুরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, হাসিমুখে বললেন, ‘ওয়েলকাম টু ইন্ডিয়া, স্যার!’ ব্যস, সে যাত্রা পার পেয়ে গেলেন হিমাংশু। মোটরসাইকেল দুটি রাখলেন তাঁরা পার্কিংয়ে। সেখানকার একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘এত রাতে কোনো ভিআইপি আসবে নাকি?’ সাজেদুর একটু হেসে বললেন, ‘জি, ভিআইপি নয় “ভিভিআইপি” আসছেন।’ রাহিমা বলছিলেন সেদিনের কথা, ‘মাহি (সাজেদুরের ডাকনাম) একা একা ঘুরছে, এটা ভাবলেই খুব কষ্ট হতো। কটা দিন দাঁতে দাঁত চেপে ছিলাম। দিল্লিতে যেদিন ওকে দেখলাম, মনে হলো, এর থেকে বড় আনন্দ আর হয় না!’ জম্মু ও কাশ্মীরের তাংমার্গ শহরের ছোট্ট একটা গ্রাম ফিরোজপুরা। ২০১৬ সালে কাশ্মীর গিয়েছিলেন সাজেদুর। সেবার ফেরার পথে ফিরোজপুরায় এক রাত ছিলেন এহসান নামের এক স্থানীয় লোকের বাসায়। এহসানদের ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে এবারও গিয়েছিলেন সেখানে। ডিসেম্বর, ভরপুর শীত। পুরো ফিরোজপুরাই ঢেকে ছিল শুভ্র তুষারের চাদরে। চোখ ধাঁধানো সাদা চাদরের মাঝে মাঝে বাহারি রঙের ঘরবাড়ি। আকাশটা ঝকঝকে নীল। এবারই প্রথম দেশের বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন রাহিমা। ছবির মতো সুন্দর কাশ্মীর তাঁর চোখে লেগে আছে, ‘এই ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কাশ্মীর, মন কেড়ে নিয়েছে বলতে পারেন। সেখানকার মানুষগুলোও খুব আন্তরিক। এত ভালোবাসা পেয়েছি যে ভোলার নয়।’ কেবল কাশ্মীর নয়, সাজেদুর-রাহিমা দুজনই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ভারতের যেখানেই গেছেন, সেখানেই পেয়েছেন মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। স্থানীয় বাইকারদের আন্তরিকতার নাকি তুলনা নেই। বিপদে এগিয়ে এসেছেন নির্দ্বিধায়, একাধিকবার। সংগ্রহঃ প্রথম আলো

প্রডাক্টস সাজেশন