মোটর সাইকেল ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ সিস্টেম
2020 Jan 31 09:48:00
ফ্লাশ প্রসেসের মাধ্যমে
ইঞ্জিনের ভিতর থাকা নানা রকম
ডার্ট ক্লিন করা হয়। একটা
নির্দিষ্ট সময় পর পর ফ্লাশ
দেয়া ইঞ্জিনের জন্যে অনেক
ভালো,(না দিলেও কিন্তু বড় কোন
ক্ষতি হবে না,
তবে দিলে ভালো। এটা অপশনাল
কাজ, তাই যদি আপনার মনে হয়
নিয়ম মত দিতে পারবেন না বা ভুল
হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাইলে
ফ্লাশ থেকে দূরে থাকবেন। )
কিন্তু সঠিক নিয়মের
অভাবে এই ফ্লাশ প্রসেস অনেক
সময় ভুল ভাবে দেয়া হয় যা
ইঞ্জিনের জন্যে ক্ষতি বয়ে
আনতে পারে।
আজ এই পোস্টে ইঞ্জিন ফ্লাশ
কেন দিবো, ফ্লাশ অয়েল কিভাবে
কাজ করে, কিভাবে দিবো এবং কোন
ব্রান্ডের ফ্লাশ অয়েল ইউজ
করবো তা নিয়ে আলোচনা করবো।
ইঞ্জিন ফ্লাশ কেনো প্রয়োজন?
আমরা ৯৫-৯৯% ইউজার ইঞ্জিন অয়েল
হিসাবে মিনারেল অয়েল ইউজ
করি। এছাড়া অনেকেই সিনথেটিক
বা সেমি-সিন্থেটিক অয়েল ইউজ
করি যা বেশি ভাগ ক্ষেত্রে
মিনারেল থেকে উদ্ভূত গ্রুপ-৩
বেজ
অয়েল বা গ্রুপ-৩ মিক্স করা
মিনারেল অয়েল । মিনারেল অয়েল
এর একটা নেগেটিভ সাইড হলো
ইঞ্জিন চলার সময় এইটা হাই
টেম্পারেচারে জখন অক্সিজেন
এর সংস্পর্শে আশে তখন
অক্সিজেন
এর সাথে খুব ধীর প্রসেসে
রিয়াক্ট করে অন্য একটা অণু
তৈরি করে। (বেপারটা সহজভাবে
রসায়নের ভাষায় বললে এইরূপ হয়
যে মিনেরেল অয়েল এর যেই লম্বা
হাইড্রো- কার্বন চেইন এর
অণু এর আউটার হাইড্রোজেন
পরমানু কে অপসারন করে
অক্সিজেন পরমাণু নিজে ঢুকে
যায় খুব জটিল একটা রি-একশানের
মাধ্যমে। তখন হাইড্র- কার্বন
এর এর কিছু অণু অন্য পদার্থের
অণু হয়ে যায় )
এই অণু যেই পদার্থ তৈরি করে তা
আমরা " অয়েল স্লাজ(Oil Sludge)" নামে
চিনি।
এই স্লাজ পদার্থ পুরাপুরি
তরল হয় না, এটা আংশিক কঠিন বা
কলয়ডাল থক থকে পদার্থ হয়ে যায়
কারন অয়েল ফেজ থেকে এটা বের
হয়ে আসে, যা তরল ইঞ্জিন অয়েল
এর উপরি ভাগে কিছু
অংশ ভাসতে থাকে(অনেকটা
ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ওয়াশ
করার পর পড়ে থাকা ডিটারজেন্ট
এর পানিতে যেই ময়লার গাদ ভেসে
থাকে তার মত) । এছাড়া মিনারেল
অয়েলে সালফার জাতীয় পদার্থ
থাকে যাও স্লাজ তৈরি করে।
এই স্লাজ ইঞ্জিনের জন্যে
ক্ষতিকর যা নিম্নের ক্ষতি
গুলো করে
- পিস্টন এর অয়েল রিং এর ঐখানে
অনেকগুলা ছোট ছোট ছিদ্র আছে,
যা ইঞ্জিন চলার সময়
পিস্টন-সিলিন্ডার সারফেসে
স্প্রে হওয়া ইঞ্জিন অয়েল এর
কিছু অংশ অই ছিদ্র দিয়ে ঢুকে
পিস্টন-কানেক্টিং রড বিয়ারিং
কে লুব্রিকেট করে। ইঞ্জিন
অয়েল স্লাজ এই পিস্টনের
ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র গুলোকে
আংশিক বন্ধ করে দেয় একটা
দীর্ঘ সময়ের প্রসেসে। যার
ফলে প্রপার
লুব্রিকেশানের অভাবে
পিস্টনের সেখানে কানেক্টিং
রড বিয়ারিং এর ক্ষতি করে।
- ইঞ্জিনের ভিতর বাতাস পাস
হওয়ার একটা ছিদ্র আছে যা
স্লাজ বন্ধ বা আংশিক বন্ধ করে
দেয় আস্তে আস্তে।
-ইঞ্জিনের ভিতর থাকা বিভিন্ন
বিয়ারিং এন্ড গিয়ার পিনিয়াম
এর কার্জ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- ইঞ্জিনের পার্টস গুলার ভিতর
একটা ময়লার আস্তরন তৈরি করে।
এছাড়া ডিজেল ইঞ্জিনের
ক্ষেত্রে ডিজেলে সালফার থাকে
বলে তা খুবি অল্প মাত্রার
সালফিউরিক এসিড তৈরি করে যা
এসিডিক স্লাজ তৈরি করে একটা
আস্তরন তৈরি করে ইঞ্জিনে(
অবশ্য ডিজেল ইঞ্জিনের ইঞ্জিন
অয়েলে TBN ভ্যালু বেশি রাখা হয়
যাতে এই এসিড ইঞ্জিনের কোন
ক্ষতি না করে)
এইসব কারনে একটা টাইম পর পর
ইঞ্জিন ফ্লাশ অয়েল দিয়ে
ফ্লাশ দিয়ে এই স্লাজ ক্লিন
করলে ইঞ্জিনের জন্যে অনেক
সুফল বয়ে আনে।
ফ্লাশ দেওয়ার সুফলঃ
ফ্লাশ দিলে নিম্নোক্ত সুবিধা
গুলা পাওয়া যায়-
- ইঞ্জিন স্লাজ মুক্ত করবে।
- ইঞ্জিন পার্টস গুলার
হলুদাভাব বা ব্ল্যাকিশ ভাবটা
চলে একদম ক্লিন হয়ে যাবে।
- ইঞ্জিনের আয়ু বৃদ্ধি পাবে
- ইঞ্জিনের ম্যাক্স পাওয়ার
ডেলিভারি করতে পারে এন্ড
বিয়ারিং এন্ড পিস্টন ক্লিন
হওয়ার কারনে বাইক একটু স্মুথ
লাগে।
- মাইলেজ সামান্য বেড়ে যায়
(যদি ডার্ট বেশি তৈরি হয়ে থাকে
আগে)
- গিয়ার স্মুথ হয়ে যায়।
- ভাল্ভ ক্লিন হয়,পিস্টন রিং
এর হোল গুলো একদম ক্লিন হয়ে
যায়।
-টাইমিং চেন ক্লিন হওয়ার
কারনে এর সাউন্ড কিছুটা কমে
বা স্মুথ লাগে।
- ইঞ্জিনের ভিতর বাতাশ পাস
হওয়ার হোল টা ক্লিন হওয়ার
কারনে এয়ার পাসিং ভালো
থাকে,যা ইঞ্জিন অভার হিটিং
কমায়।
ফ্লাশ অয়েল কি ?
সংক্ষেপে বললে এটা একটা
অ-পোলার ডিটারজেন্ট এন্ড
সারফেকটেন্ট অণু দিয়ে তৈরি
কিছু ডিটারজেন্ট
কেমিক্যালের সম্মিলনে তৈরি
একটা সলুশান বা তরল। ইহা সলিড,
সেমি-সলিড বা সফট স্লাজ এর
সারফেস টেনশান কমিয়ে একে
দ্রবীভূত করে ফেলে এন্ড
স্লাজ কে লিকুইড দশা তে নিয়ে
গিয়ে ইঞ্জিন অয়েলের সাথে
মিশিয়ে ফেলে।
কিভাবে ফ্লাশ দিবো ?
ফ্লাশ দেয়া ইনিজিনের জন্যে
ভালো, তবে ফ্লাশিং সিস্টেম
সঠিক উপায়ে না দিলে উলটা
ইঞ্জিনের জন্যে অনেক ক্ষতি
বয়ে আনবে। খুবি সতর্কতার
ফ্লাশ দিতে হবে।
ফ্লাশ দেয়ার নিয়মঃ
১। যদি ফ্লাশ দিতে চান তবে তখন
সামনে যেইবার ইঞ্জিন অয়েল
চেঞ্জ করার সময় হবে সেইবার
ফ্লাশ দিবেন।
২। বাইককে ডাবল স্ট্যান্ডের
উপর রাখবেন এন্ড খেয়াল
রাখবেন যে পিছনের চাকা যাতে
মুক্ত ভাবে ঘুরতে পারে।
৩। ইঞ্জিনের ভিতর পুরাতন
অয়েল তো আছেই, সেই অয়েল এর
সাথে ৭০-১০০মিলি (সর্বচ্চো
১০০মিলি) ফ্লাশ অয়েল দিবেন!
ভুলেও পুরাতন অয়েল বের করে
অনলি ফ্লাশ অয়েল দিয়ে ফ্লাশ
দিবেননা।
( ভুলেও ফুল বোতল ফ্লাশ অয়েল
ঢালবেননা!! ফুল বোতলে
সাধারনতো ৪৪৩মিলি ফ্লাশ অয়েল
থাকে যা ৫-৮ লিটার ইনজিন অয়েল
চেম্বারের গাড়িতে ইউজ করা হয়
পুরাপুরি,কিন্তু বাইকের অয়েল
চেম্বার ম্যাক্স ১ লিটার
হয়(১২০০মিলি ও আছে)। ফ্লাশ
অয়েল এর কোনও লুব্রিসিটি
নাই,এটা উলটা ইঞ্জিন অয়েলের
লুব্রিসিটি কমাই দেয়। তাই ১
লিটার ইঞ্জিন অয়েলের সাথে
যদি আপনি পুরো ৪৪৩ মিলি ফ্লাশ
অয়েল ১ লিটার ওয়েলের সাথে
ঢেলে দেন তাইলে ফ্লাশ অয়েল
ইঞ্জিন অয়েলের লুব্রিসিটি
বেপক ভাবে কমিয়ে দিবে যা
ফ্লাশিং এর সময় পিস্টন ক্ষয়
করে ফেলবে !!! সবাই এই ভুলটা
কমনলি করেন ফ্লাশ
দেয়ার সময়, তাই জোর দিয়ে কথাটা
বললাম। খুব সাবধান থাকবেন এই
পয়েন্টে! )
৪। এরপর বাইক সফটলি স্টার্ট
দিবেন এন্ড বাইক কে আইডল আর পি
এম(১০০০-১২০০) এ রেখে দিবেন
১০-১২ মিনিট। ভুলেও থ্রটল
দিবেন্না এই
সময়ে !! থ্রটলে এই ১০-১২ মিনিট
হাত দেয়া পাপ !!
৫। এই ১০-১২ মিনিটে আপনি ক্লাচ
ধরে সব গুলা গিয়ার ফেলবেন
এন্ড আন-ডু করবেন
কয়েকবার,তাইলে গিয়ার পিনিয়াম
গুলার ভিতর ময়লা গুলা ক্লিন
হয়ে যাবে।
৬। ১০-১২ মিনিট পরে বাইক বন্ধ
করবেন এন্ড ড্রেন নাট খুলে
অয়েল ড্রেন দিয়ে দিবেন।
কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে অয়েল
ড্রেন দিবেন যাতে লাস্ট ড্রপ
পর্যন্ত অয়েল বের হয়।
৭। যেইসব বাইকের এক্সটারনাল
ফোম অয়েল ফিল্টার আছে (যেমন yamaha
fzs-fazer, SZ-R, tvs Apache rtr, suzuki Gixxer, Gs-150R , bajaj discover,
pulsar As & LS , Keeway er 125 and 150 cc bikes etc )
সেইগুলোতে অবশ্যই ফ্লাশ শেষে
ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার
পাল্টাতে হবে।
৮। সব শেষে নতুন ইঞ্জিন অয়েল
ঢালতে হবে। এই নতুন অয়েল টি
তার অপ্টিমাল ড্রেন পিরিওড
থেকে ২০০-৩০০ কিমি কম চালাতে
হবে কারন ইঞ্জিনের ভিতর থাকা
যত-সামান্য কিছু ফ্লাশ অয়েল
রেসিডিউ নতুন ইঞ্জিন অয়েলের
সামান্য degrade করে। তাই যদি
মিনারেল অয়েল ঢুকান তাইলে
৭০০ কিমি তে ড্রেন দিয়ে দিবেন
সেই নতুন অয়েল টি। ২য় অয়েল
থেকে জেনারেল ইন্টারভেলে
ড্রেন দিবেন।
কত কিমি পর পর ফ্লাশ দিবো?
ফ্লাশ দেয়া ইঞ্জিনের জন্যে
ভালো, বাট না দিলে যে ইঞ্জিনের
খুব ক্ষতি হবে তা নাহ। কেও
মিনারেল অয়েল নিয়মিতো ইউজ
করলে ৭-১০ হাজার কিমি পর পর
একবার ফ্লাশ দেয়া খুবি ভালো
হবে। আর সিনথেটিক অয়েল ইউজ
করলে ১৩-১৫ হাজার কিমি পর পর
দিলে ভালো ইঞ্জিনের জন্যে ।
কোন ফ্লাশ অয়েল ইউজ করবো ?
লোকাল মার্কেটে Mannol ফ্লাশ
অয়েল পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু
ভালো ভালো অনলাইন পেজ এ
জার্মানির OWS, আমেরিকার Quaker City
পাওয়া যায়। এছাড়া Liqui Moly টাও
পাওয়া যায় বাজারে। এইগুলার
যেকোনো একটা ইউজ করতে পারেন।
ভুলেও কেরসিন,পেট্রল বা
ডিজেল কে ফ্লাশ অয়েল হিসাবে
ব্যাবহার করবেননা।
[সংগৃহীত]