চুরি হওয়া থেকে মোটরসাইকেল নিরাপদ রাখার উপায়
2020 Sep 23 02:27:00
চুরি হওয়া থেকে মোটরসাইকেল
নিরাপদ রাখার উপায়
গত বছরের হিসেবে, শুধু
ব্রিটেনেই ২০, ০০০
মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। চুরি
হওয়া মোটরসাইকেলের ৭০ শতাংশই
চুরি হয় বাসা থেকে।
টেলিগ্রাফ পত্রিকার জরিপে
দেখা যায়, চুরি হওয়া
মোটরসাইকেলের চল্লিশ শতাংশই
উদ্ধার করতে পারে পুলিশ,
বাকিদের পাওয়া যায় না কোন
হদিস।
ভীতিকর পরিসংখ্যান, খোদ
ব্রিটেনেই যখন এমন অবস্থা,
যেখানে আইন শৃঙ্খলা
পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে
অনেক ভালো বলেই মনে হয়,
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল
চোরদের হাত থেকে কতটা
অনিরাপদ এবং হুমকিতে, তা তো
আন্দাজই করা যায়।
সাধারণ ব্যাপার, যত বেশি আপনি
সচেতন হবেন, চোরদের দৌরাত্ব
ততই কমবে, আপনি উদাসীন হয়ে
তাদের জায়গা করে দিলে এ
পরিসংখ্যান ক্রমশ ভয়ংকর
দিকেই যাবে। তাই আপনার
মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা
বাড়িয়ে নিতে হন সচেতন, মাথায়
রাখতে পারেন এ বিষয়গুলো,
চেইন ব্যবহার করুন
নোঙর করার শেকলকে বলা হয়
মেরিন এঙ্কর, কেস হার্ডেন্ড
স্টিলের তৈরী এ ধরণে শেকল বা
চেইন ব্যবহার করতে পারেন
মোটরসাইকেল লক করতে।
ব্র্যান্ডের চেইনের মত এরা
তেমন ব্যয়বহুল নয়। তবে আপনি
ব্র্যান্ডের চেইন চাইলে আমরা
বরং পরামর্শ দেবো এ্যালমাক্স
অথবা প্র্যাগম্যাসিস
ব্র্যান্ডের চেইন নিতে।
বোল্ট কাটারের সামনে সাধারণ
চেইন না টিকলেও ১৬
মিলিমিটারের বেশি সলিড স্টিল
চেইন ভালো সময় টিকে থাকে।
শেকল মাটি থেকে উপরে রাখুন
চেইন বা শেকল মাটিতে রাখা
থাকলে চোর মাটিতে রেখে দ্রুত
বোল্ট কাটার ব্যবহার করার
সুযোগ পায়, খুব সহজেই চেইনের
যেকোন একটা রিং ফাঁকা করিয়ে
শেকল খুলে ফেলে।
সুবিধা অনুযায়ী চেইন ফিট
করুন
ফ্রেম, সামনের চাকা কিংবা
পেছনের চাকা, যে কোন একটা খুলে
ফেলা সহজ, এই সহজ কাজটাই কঠিন
হয়ে যাবে যখন দুটো খুলতে হবে।
তাই আপনার সুবিধাজনক অবস্থায়
চেইন ফিট করে চোরের কাজকে
কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলুন।
ডিস্ক লক
ডিস্ক লক হয়তো লক হিসেবে খুব
কার্যকরী না, তবে চাকাতে যখন
ডিস্ক লক লাগানো হয়, তখন এতে
লাথি কিংবা হাতুড়ি, যে কোন
ভাবেই আঘাত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তাই সম্ভব হলে দুই চাকাতেই
ডিস্ক লক লাগান।
পার্ক করুন দৃশ্যমান জায়গায়
ভেতরের অন্ধকার গ্যারেজ থেকে
মোটরসাইকেল বা গাড়ি প্রায়ই
চুরি হলেও পার্কিং লট থেকে
বাইক বা গাড়ি চুরির হার খুবই
কম। তাই পার্কিং করার
ক্ষেত্রে দৃশ্যমান জায়গাকে
অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ, সাথে
যদি নিজের কর্মস্থল থেকে
নজরে রাখা যায়, তাহলে তো কথাই
নেই।
সিকিউরিটি এ্যালার্ম
মোটরসাইকেল বা গাড়ির লকে এখন
প্রায় সবাইই এ্যালার্ম
ব্যবহার করছে। মোটরসাইকেল
অন্য কেউ টাচ করলেই তীব্র
শব্দে এ্যালার্ম বেজে উঠে
চোরকে যেমন ভড়কিয়ে দেয় তেমনি
আশেপাশের মানুষকে সচেতন করে
তোলে।
ডাটা ট্যাগ
ডাটা ট্যাগের কারণে হয়
চার-পাঁচ হাজার টাকা খসবে
আপনার পকেট থেকে, যাবে প্রতি
মাসেই আরো কিছু তবে আপনাকে
আশ্বস্ত করতে বলা যায়, এই
প্রযুক্তি ব্যবহারে নব্বই
শতাংশ পর্যন্ত মোটরসাইকেল
নিরাপদ হয়ে যায় চোরদের হাত
থেকে। মোটরসাইকেল চোরদের
জন্য আরো বড় দুর্ভাবনার
ব্যাপার হচ্ছে, ডাটা
ট্যাগযুক্ত মোটরসাইকেল
চুরির পর উদ্ধারের হার প্রায়
শতভাগ।
ডাটা ট্যাগ স্টিকার
যেহেতু উপরের
পরিসংখ্যানগুলো আরো
ভালোভাবে জানা চোরদের, তারা
ভালোভাবেই জানে এখন, ডাটা
ট্যাগযুক্ত বাইক চুরি করলেও
হজম করতে পারবে না, সেহেতু
তারা এ ধরণের প্রযুক্তি
ব্যবহৃত বাইক চুরি এড়িয়ে
চলারই চেষ্টা করবে৷ এখন
আপনার দায়িত্ব শুধু বাইকে
ডাটা ট্যাগ লাগানোই না, চোরকে
জানিয়ে দেয়া আপনার বাইকটি
ডাটা ট্যাগযুক্ত। এজন্য
বাইকের দিকে তাকালেই যেসব
জায়গায় সবার আগে চোখ যায় এমন
দৃশ্যমান জায়গায় ডাটা ট্যাগ
স্টিকার লাগিয়ে রাখতে হবে।
স্টিকারের রংও হওয়া উচিৎ চোখ
ঝলসানো রঙ্গিন, যাতে না
চাইলেও চোখ চলে যায়
স্টিকারে৷
স্টিকার লাগানোর উল্টোপিঠ
পেশাদার চোর যারা, তারা একটু
বেশি সাহসী হলে ডাটা ট্যাগ
থাকা স্বত্তেও চুরি করবে,
তারপর প্রথম যে কাজটি করবে তা
হলো, ট্র্যাকারটি খুঁজে বের
করে ডিজেবল করা। তাই
উল্টোটাও বলা যায়, স্টিকার
লাগিয়ে চোরকে সচেতন করা উচিৎ
হবে কি? ট্যাকার ডিজেবল করে
ফেলা মানে আপনার বাইক খুঁজে
পাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস
পাওয়া।
তবুও ট্র্যাকার
মোটরসাইকেলের উপর চোরের
আক্রমণ হওয়া থেকে বাঁচতে
ট্র্যাকার হয়তো কোন কাজে
দেবে না, তবে এটি চুরি হওয়া
মোটরসাইকেল ফেরত পাওয়ার
সম্ভাবনা বাড়ায় অনেক গুণ।
এছাড়া, ট্র্যাকার ইনেবলড
করলে ইন্সুরেন্স
কোম্পানিগুলোও তাদের চার্জ
কমিয়ে দেয় সাধারণত।
নিয়মিত পার্কিং লোকেশন
পরিবর্তন
পার্কিং লোকেশন এলোমেলোভাবে
পরিবর্তন করুন অর্থাৎ
প্রতিদিন এক জায়গায় পার্ক না
করে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন
জায়গায় করুন।
সাম্প্রতিক কিছু সিসিটিভি
ফুটেজে চুরির ভিডিও
এনালাইসিস করে দেখা যায় যে,
চোর প্রথম দিনেই এসে চুরি
করছে না, বরং সে পর পর কয়েকদিন
বাইকের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি
করছে, আশেপাশের এলাকা
পর্যবেক্ষণ করছে, সময়ের
হিসেব রেখে বের করছে কোন সময়
লোক চলাচল বেশি, কোন সময় থাকা
ফাঁকা। এসব নিয়ে বেশ একটা
চৌর্য গবেষণা করে চোর মহাশয়
চুরি করছেন তার জন্য সেরা
দিনের সেরা সময়ে।
চোরকে এতো সুবিধাজনক সময় বের
করতে গবেষণা করার সুযোগ না
দিয়ে মোটরসাইকেল পার্ক করুন
এক এক দিন এক এক জায়গায়, ভিন্ন
ভিন্ন পজিশনে। কাজের মাঝেও
যদি পার্কিং লটে চেক করতে
আসার সুযোগ থাকে, তাহলেও
প্রতিদিন একই সময়ে না এসে
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আসুন।
চোখ কান খোলা রাখুন
সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হচ্ছে
নিজে সচেতন থাকা। হাই
স্ট্রেস স্টিলের চেইনও যেমন
বেশি সময় নিয়ে হলেও কেটে ফেলা
যায় বোল্ট কাটার দিয়ে, তেমনি
ডাটা ট্যাগ ট্র্যাকারও চাইলে
ডিজেবল করে ফেলা যায়। তবে
নিজে সচেতন থাকলে, ট্র্যাকার
ডিজেবল, লক ডিজেবল কিংবা চেইন
কাটারের পরিস্থিতি, কোনটাই
আসতে পারে না মোটরসাইকেলের
কাছে।
তাই প্রতিদিনের চলাচলের সময়,
পার্ক করা সময় আশেপাশে
তাকিয়ে দেখুন, প্রায় নিয়মিত
অপরিচিত কোন মুখ চোখে পড়ছে
কিনা। আড্ডা দেয়ার সময় বা
অন্য কোথাও আপনার মোটরসাইকেল
কত ভালো বা কত দামী, এ
বিজ্ঞাপন করা থেকে বিরত
থাকুন, চোর যদি আশেপাশে থেকে
থাকে, তার মনে লোভ বাড়িয়ে
দিচ্ছেন আপনিই।
বাড়ি ফিরে বাইক লক করতে কিংবা
চেইন লাগাতে অথবা এ্যালার্ম
অন করতে ভুলে গেছেন কিনা, সে
সম্পর্কে সচেতন থাকার চেষ্টা
করুন। সর্বোপরি সচেতনতাই
পারে মোটরসাইকেল নিয়ে এমন
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার
মুখোমুখি হওয়া থেকে বিরত
রাখতে।
[ অনলাইন থেকে সংগৃহীত]